রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:৩৭ অপরাহ্ন

স্বাগত ১৪২৯ সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনুক

আরও একটি বাংলা নতুন বছরে পা রাখলাম আমরা। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে আগমন ঘটেছে নতুন বছরের। নতুনের আবাহন, স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ আমাদের মাঝে আসে। আমাদের স্বপ্নকে জাগিয়ে তোলে। আমরা উদ্দীপিত ও আনন্দিত হই। আমরা শেকড়ের কাছে ফিরে যাই। আমাদের সংস্কৃতিকে আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে ধারণ করে বাঙালি হৃদয়ে আবর্তিত হয় নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ।

দু’বছর করোনার কারণে পহেলা বৈশাখ উদযাপন হতে পারেনি। এবার রমনার বটমূলে আগের মতো উৎসবের মূল আসর বসবে পাখি ডাকা ভোরে। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রাও হবে। এবার উলস্নাসে ফেটে পড়বে সারাদেশের মানুষ।

উলেস্নখ্য, ১৯৬৭ সালে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার নব-উন্মেষকালে ছায়ানট সেই যে কাকডাকা ভোরে রবীন্দ্রনাথের নববর্ষ বরণের আবাহনী গান গেয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল, সেটিই রাজধানীবাসীর সবচেয়ে বড় উৎসবের কেন্দ্র। পহেলা বৈশাখ পরমতসহিষ্ণুতা, সদ্ভাব, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং বিবেক ও মনুষ্যত্বের দীক্ষা দিয়ে যায় আমাদের। তাই তো আমরা বলে উঠি- ‘প্রাণে প্রাণে লাগুক শুভ কল্যাণের দোলা, ‘নব আনন্দ বাজুক প্রাণে’। আজ ‘মুছে যাক গস্নানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্মিস্নানে শুচি হোক ধরা’।

মনে রাখতে হবে, নিজস্ব সংস্কৃতিকে উপলব্ধি এবং এর নিরন্তর চর্চা করা যে কোনো জাতির জন্যই গৌরবের। এ গৌরব বাঙালি জাতিরও রয়েছে। হাজার বছরের বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি আমাদের ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্যের ধারকবাহক বাঙালি। এই বাঙালি সংস্কৃতির চিরায়ত রূপ ফুটে ওঠে বাংলা নববর্ষের দিন। করোনাভাইরাসের কারণে উৎসবের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হলেও এবার পূর্বের আমেজ নিয়ে ফিরে আসছে পহেলা বৈশাখ।

অপ্রিয় হলেও সত্য, আমরা মুখে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার কথা বলি কিন্তু কাজে উল্টো। উন্নত সমাজ গঠন করতে হলে ভদ্রজনের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, তবে কোনোভাবেই শেকড় বিচ্ছিন্ন হয়ে নয়। শেকড় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মানে দেশীয় সংস্কৃতির বাইরে চলে যাওয়া। আমাদের প্রবণতা সেদিকেই। যে করেই হোক নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে হবে। দেশ এবং দেশের ঐতিহ্য ও কৃষ্টি সম্পর্কে উৎকৃষ্ট চিন্তা করা এবং কাজের মাধ্যমে তার প্রতিফলন ঘটানোই হচ্ছে সংস্কৃতি। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বিদ্যাকে যদি হীরার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে তাহাতে দু্যতি ছড়িয়ে পড়বে সেই হবে তার সংস্কৃতি’। আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘যতদিন বাংলার আকাশ থাকবে যতদিন বাংলার বাতাস থাকবে, ততদিন বাংলার সংস্কৃতি থাকবে’। কিন্তু বাংলা সংস্কৃতির চর্চা যদি বাঙালির মধ্যে না থাকে, বাঙালি যদি তার বাঙালিত্ব, বাংলা ভাষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি ভুলে যায় এবং তার চর্চা থেকে বিরত থাকে তবে বাঙালির নিজস্বতা বলতে তো আর কিছুই থাকবে না।

আমরা চাই, বর্তমান সরকার জনগণের প্রত্যাশা, আবেগ ও অনুভূতিকে যথাযথ মূল্যায়ন করে বৈরী সময়েও দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য রক্ষা নিশ্চিত করবে। দেশ ও জাতির মঙ্গলে সবার ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত দেশপ্রেম জাগ্রত হোক, খুলে যাক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার- মানুষ বেঁচে থাকুক, বাঙালি বেঁচে থাকুক সমহিমা নিয়ে। নতুন বছরে এ প্রত্যাশাই করছি। দুঃখ-গস্নানি, অতীতের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে তাই এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেওয়ার দিন পহেলা বৈশাখ। নতুন বছর সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনুক। দেশের সবার কল্যাণ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Titans It Solution